সংবাদ শিরোনামঃ
শিক্ষার মানোন্নয়নে সকলকে আন্তরিকতার সহিত কাজ করতে হবে–একান্ত সচিব মাহবুব আলম কালিগঞ্জে জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে  গাবুরা চকবারা থেকে ৩ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার করেছে বনবিভাগ শ্যামনগর অনলাইন জুয়ার মাষ্টার এজেন্ট সুমন কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ  বুড়িগোয়ালিনীতে ইউনিয়ন জামায়াতে আমীরের শপথ ও ইউনিয়ন টিম গঠন  কালিগঞ্জের পল্লীতে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে জবরদখলের অভিযোগ দেবহাটায় চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ যেনো ব্যাবসায়ীদের নেশায় পরিনত হয়েছে বন কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি তে ড্রোন উড্ডয়ন, পরিচালনা প্রশিক্ষন গাঁজাসহ শ্যামনগরে শ্বাশুড়ি-বৌমা আটক নলতায় ৪ দফা দাবিতে ছাত্র -ছাত্রীদের আন্দোলন ও ক্যাম্পাসের নাম বদল
অন্ধত্বকে হার মানিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে লিটন

অন্ধত্বকে হার মানিয়ে স্বপ্ন পূরণের পথে লিটন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ

হাজারও প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে নিজ স্বপ্নকে বাস্তবে দেখতে নিজের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টি শক্তিহীন অদম্য কণ্ঠের অধিকারি লিটন দাশ।
নিজের দু-চোখের অন্ধত্বতটা যাকে হার মানাতে পারেনি। চোখের দৃষ্টি না থাকলেও অন্তরের জ্ঞানের আলো দিয়ে গানকে নিজের মতো করে অর্জন করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সবার মাঝে। বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত “সাতক্ষীরার কণ্ঠ রিয়েলিটি শো – ২০২৩” এ অংশগ্রহন করেছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী লিটন দাশ। 


তার স্বপ্ন তার গানের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে ভালো মাপের শিল্পী হওয়া। কিন্তু তার এই স্বপ্ন পূরণে আছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা।
অদম্য এই কণ্ঠের অধিকারি থাকেন সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায়। জেলার তালা উপজেলার তালা সদর ইউনিয়নের খানপুর তার জন্মভিটা। দিনমজুর পরিমল দাশ -পূর্ণিমা দম্পতির সন্তান লিটন দাশ। দরিদ্র এই পরিবারে ৪ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি।
তার তিন ভাই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে এবং তার এক ভাই জানায়, বাবা বয়সের ভারে এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বেকার হয়ে পড়ায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে পরিবারের বাকি সদস্যের। যার কারণে বর্তমানে লিটন দাশ হাট বাজারে গান গেয়ে গেয়ে টাকা উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছে বাকি আর সদস্যদের। আবাদ উপযোগি কোন জমি জমা না থাকলেও রয়েছে শুধু ৪ শতক বসতভিটে।
পরিবার সুত্রে জানা যায়,অদম্য কণ্ঠের অধিকারী লিটন জন্মান্ধ না। জন্মের সময় সৃষ্টি কর্তার আর্শীবাদে দুই চোখ ভরা ছিলো আলো। এখান থেকে ৬ বছর আগে তার বড় ধরনের অসুখ দেখা দেয়। পরে ভুল চিকিৎসার কারণে তার দুচোখ হারাতে হয়। দু’চোখে আস্তে আস্তে ইনফেকশন হয়ে অন্ধত্ব বরণ করতে হয় লিটনকে। কিন্তু বাবা দিনমজুর হওয়ায় দরিদ্র এই পরিবারের চিকিৎসা করানোর সাধ থাকলেও নেই সাধ্য।
অদম্য কণ্ঠের অধিকারী লিটন দাশের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,’আমার ছোট থেকে ইচ্ছা আমি জীবনে গান গেয়ে বড় কিছু করবো। কিন্তু দরিদ্রের কারণে আমি আমার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারি নি। আমি আমার প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য গ্রামে গঞ্জে হাট বাজারে গান গেয়ে মানুষের মন জয় করা শুরু করি। গানকে নিয়ে বড় হওয়ার তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা আমি পাই নি।
তিনি আরো বলেন,’গানই আমার জীবন গানকে নিয়ে আমি বড় হতে চাই। আমি আমার এ দু-চোখ ভরে আবারো সুন্দর পৃথিবীটা দেখতে চাই আমার গানের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে। ধন্যবাদ জানাই জেলা প্রশাসক স্যারকে আমাকে সাতক্ষীরার কণ্ঠে সুযোগ করে দিয়ে আমার প্রতিভাকে বিকশিত করানোর জন্য।’
পরিবার সুত্রে আরো জানা যায়, লিটন দাশ দুই সন্তানের পিতা। সন্তানদের সম্পর্কে লিটন বলেন, আমি তাদের গানের মধ্য দিয়ে বড় করতে চাই। তারা যেন গানকে নিয়ে বড় হতে পারে। আমার মেয়েটা ভালো গান করে কিন্তু দরিদ্রের কারণে আমি তার ভালো কোথাও গান শিখানোর জন্য দিতে পারছি না। আমার ইচ্ছা আমি তাকে শিল্প কলা একাডেমি তে ভর্তি করাতে চাই যদি আমাকে সবাই সাহায্য করেন। লিটন দাশের পিতা পরিমল দাশ বলেন,’বাড়ি ভিটে টুকু ছাড়া কিছু নেই। আমি কাজ করতে পারি না অন্ধ ছেলে গান গেয়ে গেয়ে যে টাকা উপার্জন করে তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি বাজারে ছেলের প্রতিবন্ধি ভাতা দিয়ে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার কারণে আজ আমার ছেলের দুচোখ নষ্ট হয়ে গেলো। যেখানে নুন আনতে পানতা ফুরায় সেখানে কিভাবে ছেলের চিকিৎসার স্বপ্ন দেখি।’
তার মা পূর্ণিমা দাশ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন,’সংসারে প্রতিবন্ধি সন্তান আছে। এর মধ্যে লিটন ভালোই ছিল ছোটবেলায়। একটি সমস্যা হবার পর ভুল চিকিৎসায় ছেলেটার দুই চোখে আজ অন্ধ। আমার ছেলেটা ভালো গান গায়। সবার আমার লিটনের জন্য আশীর্বাদ করবেন যাতে করে সবার কাছে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগীতায়- সুন্দরবন আইটি লিমিটেড